তথ্যসূত্র: মাসিক আলকাউসার
৩৭৩৪. প্রশ্ন
পুরুষের জন্য অলঙ্কার ব্যবহারের হুকুম কী? তারা কি যে কোনো ধাতবের অলঙ্কার এবং যে কোনো ধাতবের আংটি ব্যবহার করতে পারবে? মহিলারা কী সোনা-রূপা, তামা-পিতল, কাঁচ-হীরা এবং ইমিটেশনের আংটি ব্যবহার করতে পারবে? দয়া করে জানাবেন।
.
উত্তর
পুরুষের জন্য সকল প্রকার অলঙ্কার নিষিদ্ধ। আর আংটির মধ্যে কেবলমাত্র রূপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয আছে। তবে তা এই শর্তে যে, রূপার পরিমাণে এক মিসকালের চেয়ে কম অর্থাৎ সাড়ে চার মাশার চেয়ে কম হতে হবে। গ্রামের হিসাবে এক মিসকালের পরিমাণ হল ৪.৩৭৪ গ্রাম। রূপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতব বা বস্তুর আংটি ব্যবহার করা পুরুষের জন্য নিষেধ। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে স্বর্ণের আংটি পরিহিত দেখে তার থেকে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি দেখে তা খুলে ফেলল। এরপর সে লোহার আংটি বানাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তো আরো মন্দ,এটা জাহান্নামীদের অলঙ্কার। তখন ঐ ব্যক্তি তা খুলে ফেলল এবং একটি রূপার আংটি বানাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিরব থাকলেন।মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫১৮
সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তবে কিসের আংটি বানাব? তিনি বললেন, রূপার আংটি বানাও। তবে এক মিসকাল পূর্ণ করো না।
আর মহিলাদের জন্যও লোহা, তামা ও পিতলের আংটি ব্যবহার করা নিষেধ। এসব ধাতবের আংটি ব্যতীত তাদের জন্য সোনা-রূপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয। তদ্রুপ পাথর, হীরা, মাটি, পুতি, কাঁচ ও ইমিটেশনের আংটিও তারা ব্যবহার করতে পারবে। আর আংটি ছাড়া অন্যান্য অলঙ্কারের ক্ষেত্রে তারা যে কোনো ধাতব বা বস্তু ব্যবহার করতে পারবে।
মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ ৩/৩৭৬; কিতাবুল আসার ২/৭২৬; ফাতাওয়া কাযী খান ৩/৪১৩; হেদায়া ৪/৪৪১; ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৫৮ ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/১৫৮
*****
১৬৯৪. প্রশ্ন
আমার এক বন্ধু একটি রোপার আংটি দিয়েছে যার উপর হীরার পাথর লাগানো আছে। আমর জানার বিষয় হল, পুরুষের জন্য কি হীরার ঐ আংটি ব্যবহার করা জায়েয আছে? দয়া করে জানিয়ে উপকার করবেন।
উত্তর
হ্যাঁ, হীরার পাথর বিশিষ্ট রোপার আংটি ব্যবহার করা পুরুষের জন্যও জায়েয।
-জামে তিরমিযী ৪/২১৮; আলজামিউস সগীর ৪৭৭; হিদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৮/৪৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬০
*****
৪৯১৫. প্রশ্ন
মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, পুরুষের জন্য রুপার আংটি ছাড়া অন্য কোনো আংটি যেমন ইমিটেশন, তামা ইত্যাদি ব্যবহার বৈধ কি না?
উত্তর
পুরুষগণ রুপার আংটি ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর আংটি ব্যবহার করতে পারবে না। আর রুপার আংটিও এক মিছকাল তথা সাড়ে চার মাষা, যা গ্রামের ওজনে ৪.৩৭৪ গ্রাম হয়- এর কম হতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন-
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَأَى عَلَى بَعْضِ أَصْحَابِهِ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَأَلْقَاهُ وَاتّخَذَ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ، فَقَالَ: هَذَا شَرّ، هَذَا حِلْيَةُ أَهْلِ النّارِ، فَأَلْقَاهُ، فَاتّخَذَ خَاتَمًا مِنْ وَرِقٍ، فَسَكَتَ عَنْهُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে স্বর্নের আংটি পরিহিত অবস্থায় দেখে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর তিনি লোহার আংটি বানালেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তো আরো মন্দ। এটা তো জাহান্নামীদের অলঙ্কার। অতপর তিনি সেটিও ফেলে দিয়ে রুপার আংটি পরলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরব রইলেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫১৮
অবশ্য লোহা, তামা ইত্যাদির উপর যদি রুপার প্রলেপ থাকে তাহলে পুরুষগণ সে আংটি পরিধান করতে পারবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬০; মাজমাউল আনহুর ৪/১৯৭; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৩৫৩
****
৩৮৩৪ . প্রশ্ন
একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত অযু করতে শুরু করি। তখন আমার হাতে ২টি আংটি ছিল। তাড়াহুড়োর কারণে সেগুলো খুলতে মনে ছিল না। সেগুলোসহই স্বাভাবিকভাবে অযু করি। পরে মনে হলে সন্দেহে পড়ে যাই যে, আমার অযু হয়েছে কি না। তবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ায় নামায পুনরায় পড়িনি। আমার উক্ত অযু ও নামায হয়েছে কি?
উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আংটি দুটি যদি এত ঢিলেঢালা হয় যে, খোলা বা নাড়াচাড়া করা ছাড়াই উভয় আংটির স্থান ভিজে যায় তাহলে অযু হয়ে গেছে। আর যদি কোনো এক আংটি বা উভয়টি এত সংকীর্ণ হয় যে, নাড়াচাড়া করা ছাড়া পানি ভেতরে যায় না তাহলে অযু হয়নি। এমনটি হয়ে থাকলে আপনাকে ঐ নামায আবার পড়ে নিতে হবে। হযরত আবু তামীম জায়শানী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. যখন অযু করতেন আংটি নাড়াচাড়া করতেন। আবু তামীমও তা করতেন। ইবনে হুবায়রাও তা করতেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১/৩৭১ (৪৫৬); মাবসূত, সারাখসী ১/১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৪২৮
.
[ মাসিক আলকাউসার ]